তুলি কলম নিয়ে চাঁদের দেশেই আজ চাঁদমামার শঙ্কর
ওয়েব ডেস্কঃ
৭০ আর ৮০র দশকে যাদের অক্ষর শিক্ষা হয়েছে তারা চাঁদমামা পড়েন নি হতেই পারে না। প্রতি মাসে কাগজের ভেণ্ডার বা হুইলারের স্টলে ঢুঁ মারলেই কচিকাঁচা দের মন কাড়ত চাঁদমামার প্রচ্ছদ আর তার ভিতরে পাতায় পাতায় রঙিন ইলাস্ট্রেসন গুলো। সেই ছবির সিংহভাগই যার আঁকা সেই কারাথোলুভু চন্দ্রশেখরণ শিবশঙ্করণ বা সহজে শিল্পী শঙ্কর মঙ্গলবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। জীবনের শেষ বেলা অবধি ঋজু ছিল তাঁর তুলির টান, কলমের আঁচড় ছিল সোজা। কখনই কাঁপেনি হাত। শেষ বয়স পর্যন্ত।
১৯২৪ এ শঙ্করের জন্ম তামিলনাড়ুর ইরোড জেলার একটি গ্রামে। ছোটবেলা থেকেই আঁকার নেশা। নেশা এমনই যে ইতিহাস পরীক্ষার খাতায় উত্তরের সঙ্গে ঐতিহাসিক চরিত্রগুলির ছবিও এঁকে দিতেন তিনি। শোনা যায় একবার একটি স্কুলে বিদ্যালয় পরিদর্শকের আসার কথা ছিল। সেই স্কুলের ছাত্ররা কেউ ছবি আঁকতে পারত না। তাদের হয়ে সবার খাতায় ছবি এঁকে দেন শিল্পী শঙ্কর।
সেই স্কুলের এক শিক্ষকের একটি কথা বদলে দেয় শঙ্করের জীবনের গতিপথ। তিনি শঙ্করকে পরামর্শ দেন যে পড়াশোনার পিছনে না ছুটে শঙ্কর যেন আঁকাকেই তার ক্যারিয়ার করে। তখন ইণ্টারমিডিয়েট পাশ করেছেন শঙ্কর। ১৯৮১ এ ভর্তি হলেন মাদ্রাজ ফাইন আর্টস কলেজে।
আর্ট কলেজ থেকে পাশ করে পেট চালানোর তাগিদে চাকরি নিলেন ‘কলাইমগল’ প্ত্রিকায়। ৫১টাকা মাসিক বেতনে শুরু। পরে বেতন বেড়ে হয় ১৫০ এই সময়ে তাঁর বাল্য বন্ধু নাগি রেড্ডি শুরু করেন চাঁদমামা। শঙ্করকে ডেকে নেন নাগি। ৩৫০ টাকার মাসিক বেতনে জীবন কিছুটা সহজ হয়। সেই থেকে ৯০ এর শেষ পর্যন্ত চাঁদমামাতেই শঙ্কর। সহকর্মী ইলাস্ট্রেটর চিত্রা আর শঙ্কর চাঁদমামাকে তুলে নিয়ে যায় এক অন্য উচ্চতায়।
৯০ এর সেশে চাঁদমামা বন্ধ হবার পর আর কোথাও চাকরি করেন নি শঙ্কর। ২০১১ আবার চাঁদমামা শুরু হলে ৮৭ বছর বয়সে কাজে যোগ দেন কারাথোলুভু চন্দ্রশেখরণ শিবশঙ্করণ।

শঙ্করের ড্রয়িং, স্কেচ ও ইলাস্ট্রেসনের মধ্যে এক অতিপ্রাকৃতিক বা ঐশ্বরিক ছোঁয়া পাওয়া যেত। যেন স্বপ্ন স্বপ্ন ঘুম। যেন বিচ্ছুরিত চন্দ্রালোকে ভেসে যাচ্ছে চরাচর, তার মাঝেই ভেসে রয়েছে তাঁর চরিত্ররা। আজকের অ্যানিমেটেড ক্যারেক্টারের ভিড়েও তাই নক্ষত্রের মতই উজ্জ্বল শঙ্করের সৃষ্টি। আর সেই নক্ষত্রদের দেশেই এখন চাঁদমামার শঙ্কর।